বাংলার সমতল ভূমিতে সর্পিল নদী বেষ্টনে পলল অঞ্চলের এক গভীরঐতিহ্যের বিস্তৃতউর্বর ভূমি পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল।ব্রহ্মপুত্র নদের বন্ধন সূত্রে এবং স্রোতবাহিত পলি দিয়ে গড়ে উঠেছে এর গ্রামাঞ্চল।শাখা নদী ও উপ নদীর বেষ্টনে গড়ে উঠেছে সরলভাগ্যান্বেষী, মৎস্যজীবী, শরণার্থী ও আদিবাসীদের মিশ্রিত জন সমাজ।
এ বিস্তৃতজন সমাজে নিক্ষিপ্ত হয়েছে অর্জুনের গাম্ভীর, ঝলসে উঠেছে ঈশা খাঁ'রতরবারী - এরই বুকেঝলসে উঠেছে ব্রিটিশ কামান, পাকিস্তানীদের বুলেট।এর একদিকে বীরত্বপূর্ণ গণসংগ্রামের ইতিহাস, অন্যদিকে লোক সাহিত্য ও লোকজশিল্পের বিশ্বখ্যাত ঐতিহ্য।ব্রহ্মপুত্রের পূর্বে এবং হাওড় অঞ্চলের পশ্চিম সংলগ্ন এক বিস্তৃতপলিবাহিত সমতল ভূমি, অধূনা খ্যাত ভাটি অঞ্চলের সিংহদ্বার যার পূর্বে- নিকলী ও ইটনা উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ সদর, উত্তরে তাড়াইল ও ইটনা উপজেলা, দক্ষিণে নিকলী ও কিশোরগঞ্জ সদর।এ বেষ্টনে প্রায় দুইশতাধিক বর্গ কিঃমিঃ অঞ্চলনিয়েকরিমগঞ্জউপজেলা -লোক ঐতিহ্য ও বীরত্বে ইতিহাস খ্যাত।
১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দের দিকে ঈশা খাঁ আকবরের শক্তিশালী বাহিনীর মোকাবেলা করেন।কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি জমিদার নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবংসোনারগাঁয়ে তার রাজধানী স্থাপন করেন।এসময়ে কুচ রাজার নিকট থেকে জঙ্গলবাড়ী দূর্গ দখল করে নেন এবং ভাটি অঞ্চলেরশাসন কার্য পরিচালনা ও নিরাপত্তার কারণে জঙ্গলবাড়ীতে দ্বিতীয় রাজধানীস্থাপন করেন।আবার এ সময়ে অর্থ্যাৎ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জঙ্গলবাড়ীর অদূরে বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগেরশ্রেষ্ঠ মহিলা কবি চন্দ্রাবতী পাতুয়াইর গ্রামের বিদগ্ধ ভাষাণ গায়কদ্বীজবংশীরঘরে জন্মগ্রহণ করেন এবং পিতৃগৃহে বসে রচনা করেন বাংলা ভাষার একমাত্র লোকজ রামায়ন।ঠিক তখনই সুচি শিল্পের উন্নতিতে জঙ্গলবাড়ী বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিল।জঙ্গলবাড়ী মসলিন কাপড়ের জন্য জগত বিখ্যাত হয়েছিল।জঙ্গলখাস, নয়নমুখ নামক সূক্ষ সুতার তৈরী মসলিন মোগল সম্রাটদের দরবারে সাদরে গৃহীত হয়েছিল।এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯০০ শতকের প্রথমার্ধে জেমস্ টেলরের বর্ণনায়।তিনি উল্লেখ করেছিলেন জঙ্গলবাড়ীতে প্রায় ১০০ ঘর মসলিন তাঁতি পরিবার ছিল।
মধ্যযুগে চন্দ্রাবতী, ঈশা খাঁ, মসলিন শিল্প, বংশীদাস এবং কুচরাজা ও তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত করিমগঞ্জেও সময়ের সাথে সাথে ঘটেছে পরিবর্তন।ফলে এক দিকে ভাব সংগীত, ভাষাণ গান আর গ্রাম্য পালা গানের যেমন পল্লী কবিরা রচনা করেছিলেনজীবন ঘনিষ্ট গীত ও গীতিকা।অন্যদিকে কৃষক আন্দোলন, স্বদেশীআন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ ইত্যাদিতে করিমগঞ্জের বীর সন্তানেরা রেখেছেনঅবদান।
বিখ্যাত"মৈমনসিংহ গীতিকা'র" শিল্পীত সাহিত্য রত্নের পরশে করিমগঞ্জ গর্বিত।বীরত্ব গাথা, সুচি শিল্প আর সংগ্রামী চেতনার এক উর্বর লীলাভূমি করিমগঞ্জ।দ্বীজবংশী দাস, চন্দ্রাবতীর পাশে ইশা খাঁ, বীরঙ্গনা সখিনা, কমর উদ্দিন হোসাইন, মুন্সী আজিম উদ্দিন এঁরা করিমগঞ্জের ইতিহাসকে করেছেন সমৃদ্ধ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস